১. কুরবানীর হুকুম
কুরবানী করা সুনান মুআক্কাদা (প্রকৃষ্ট সুন্নত)। সামর্থ্যবান মুসলিমদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হাদিসে এসেছে:
কুরবানী সম্পর্কে ইসলামিক ফতোয়া নিম্নরূপ:
“রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কুরবানীর দিনে দুটি সাদা-কালো শিংবিশিষ্ট দুম্বা জবেহ করেন... তিনি বলেন, ‘এটি আমার উম্মতের সেই সব লোকের পক্ষ থেকে, যারা কুরবানী করতে পারবে না।’” (সুনান ইবনে মাজাহ, ৩১২৭)
২. কুরবানীর শর্তাবলী
নিসাব পরিমাণ সম্পদ: যার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে ৭ তোলা সোনা বা সাড়ে ৫২ তোলা রূপা বা সমমূল্যের সম্পদ থাকবে, তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।
সময়: জিলহজ্জের ১০ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত কুরবানী করা যায়।
. পশুর যোগ্যতা
গরু, উট, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি কুরবানী করা যায়।
পশুটি নিরোগ ও সুস্থ হতে হবে, অন্ধ, খোঁড়া, অতি রুগ্ন বা কৃশকায় হলে চলবে না।
বয়স: ছাগল/ভেড়া ১ বছর, গরু ২ বছর, উট ৫ বছর পূর্ণ হতে হবে।
৪. একাধিক ব্যক্তির কুরবানী
গরু/উটে সর্বোচ্চ ৭ জন শরিক হতে পারেন (শর্ত হলো সকলেরই নিয়ত কুরবানীর হওয়া)।
ছাগল/ভেড়া শুধুমাত্র একজনের পক্ষে কুরবানী করা যায়।
৫. গোশত বণ্টন
কুরবানীর গোশত ৩ ভাগে বিভক্ত করে ১ ভাগ গরিব-মিসকিন, ১ ভাগ আত্মীয়-স্বজন এবং ১ ভাগ নিজের জন্য রাখা মুস্তাহাব। তবে সম্পূর্ণ গোশত নিজে রাখা বা দান করাও জায়েয।
৬. জরুরি ফতোয়া
কুরবানী না করার অযুহাত: যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কুরবানী না করে, তবে সে গুনাহগার হবে। তবে অক্ষমতা বা আর্থিক সংকট হলে তা মাফ।
কুরবানীর টাকা দান করা: শুধু টাকা দান করলে কুরবানী আদায় হবে না, পশু জবেহই обяза।
৭. আধুনিক প্রশ্নোত্তর
ক্রেডিটে কুরবানী: যদি ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা থাকে, তবে জায়েয। নইলে না।
অনলাইন কুরবানী: বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অন্য দেশে কুরবানী করলে আদায় হবে, তবে স্থানীয় কুরবানী উত্তম।
মূল সূত্র: ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতে কুরবানী ওয়াজিব, অন্যদের মতে সুন্নতে মুআক্কাদা। (ফাতাওয়া আলমগীরি, হিদায়া)
কুরবানী ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, তবে এটি সকল মুসলিমের উপর ওয়াজিব নয়। নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়:
১. অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু:
নাবালক (যে শিশু এখনও বালিগ হয়নি) তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। তবে তার পক্ষ থেকে অভিভাবক কুরবানী দিলে তা সহিহ হবে।
২. অসচ্ছল ব্যক্তি:
যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই (অর্থাৎ প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা মিটানোর পর সাড়ে ৫২ তোলা রূপা বা সমমূল্যের সম্পদ না থাকলে) তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
নিসাবের হিসাবে ঋণ বা বাধ্যতামূলক খরচ (যেমন: খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা) বাদ দিতে হয়।
৩. মুসাফির (যাত্রী):
শরীয়তের দৃষ্টিতে মুসাফির (যে ব্যক্তি সফরে আছে এবং স্বগৃহে নয়) তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়, যদিও তা মুস্তাহাব বা নফল হিসেবে দিতে পারে।
৪. অবিবেচিত বা অজ্ঞানতাবশত কুরবানী না দিলে:
যদি কোনো ব্যক্তি কুরবানীর দিনগুলোতে অজ্ঞতা বা ভুলে কুরবানী না দেয়, তবে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়, তবে পরে তা কাফফারা বা নফল হিসেবে আদায় করা যেতে পারে।
৫. মৃত ব্যক্তি:
মৃত ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়, তবে তার পক্ষ থেকে ওয়াসিয়ত (উইল) থাকলে বা উত্তরাধিকারীগণ তার পক্ষ থেকে নফল কুরবানী দিতে পারেন।
বিশেষ নোট:
নারীদের ক্ষেত্রে: নারীরাও যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন এবং কুরবানীর দিনগুলোতে স্বাধীন ও সক্ষম হন, তবে তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব।
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি: যদি কারো ঋণ থাকে এবং তা পরিশোধের পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকে, তবে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
সুতরাং, কুরবানী শুধুমাত্র সেইসব প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ও সচ্ছল মুসলিমের উপর ওয়াজিব, যারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক এবং মুকীম (স্বগৃহে অবস্থানকারী)।
২০২৫ সালে কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ (নিসাব) নির্ধারণ করতে ইসলামী বিধান অনুসারে নিম্নলিখিত হিসাব করা হয়:
কুরবানীর নিসাব (২০২৫ সালের হিসাবে):
সোনা: ৭.৫ তোলা (বা ৮৭.৪৮ গ্রাম) সোনার মূল্য।
রূপা: ৫২.৫ তোলা (বা ৬১২.৩৬ গ্রাম) রূপার মূল্য।
নগদ টাকা/সঞ্চয়: সোনা বা রূপার যেকোনো একটির মূল্যের সমপরিমাণ সম্পদ থাকলে কুরবানী ওয়াজিব হয়।
২০২৫ সালের আনুমানিক হিসাব (বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে):
বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী (২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত):
সোনার মূল্য: প্রতি গ্রাম ~১০,০০০ টাকা (অনুমানিক)।
তাহলে, ৮৭.৪৮ গ্রাম সোনার মূল্য = ৮৭.৪৮ × ১০,০০০ ≈ ৮,৭৪,৮০০ টাকা।
রূপার মূল্য: প্রতি গ্রাম ~১,০০০ টাকা (অনুমানিক)।
তাহলে, ৬১২.৩৬ গ্রাম রূপার মূল্য = ৬১২.৩৬ × ১,০০০ ≈ ৬,১২,৩৬০ টাকা।
যেহেতু নিসাব নির্ধারণে সোনা ও রূপার মধ্যে যে কোনো একটি বিবেচনা করা হয়, সাধারণত রূপার মূল্যই নিসাব হিসাবে ধরা হয় (যা কম)। তাই ২০২৫ সালে কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য নিসাব হবে প্রায় ৬,১২,০০০ টাকা (বা তার বেশি)।
গুরুত্বপূর্ণ নোট:
১. নিসাবের টাকার পরিমাণ স্থির নয়—সোনা/রূপার বাজারমূল্য অনুসারে পরিবর্তিত হয়।
২. ঈদুল আযহার সময় বাজারদর দেখে সঠিক হিসাব করতে হবে।
৩. শুধু সঞ্চয়ই নয়, প্রয়োজনীয় মৌলিক খরচ (বাসস্থান, গাড়ি, ব্যবসার পণ্য ইত্যাদি) বাদ দিয়ে উদ্বৃত্ত সম্পদ বিবেচনা করা হয়।
সুতরাং, ২০২৫ সালে কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য আপনার কাছে ৬ লক্ষ টাকার বেশি উদ্বৃত্ত সম্পদ থাকা প্রয়োজন (রূপার নিসাব
কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা সামর্থ্যবান মুসলিমদের উপর ওয়াজিব (আবশ্যিক)। নিম্নোক্ত শর্তগুলো পূরণ হলে আপনার উপর কোরবানি ওয়াজিব হবে:
কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্তসমূহ:
মুসলিম হওয়া: কোরবানি শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য।
প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থমস্তিষ্ক হওয়া: নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক শিশু বা পাগল হলে তাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়।
নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া:
কোরবানির নিসাব হলো—প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা (বাসস্থান, পোশাক, গৃহস্থালির জিনিসপত্র, যানবাহন ইত্যাদি) ছাড়া অতিরিক্ত সাড়ে ৭ তোলা সোনা বা সাড়ে ৫২ তোলা রূপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ বা নগদ টাকা থাকা।
বর্তমানে অনেক আলেমের মতে, সোনা বা রূপার যে কোনো একটির মূল্য হিসাব করে নিসাব নির্ধারণ করা যায়। (যেমন: সাড়ে ৭ তোলা সোনার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৪-৫ লক্ষ টাকা, তবে এটি বাজারদর অনুযায়ী পরিবর্তনশীল)।
সম্পদ ঋণমুক্ত হতে হবে (যদি কারো ঋণ থাকে, তবে তা বাদ দিয়ে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে)।
কোবানির সময়ে সম্পদের মালিকানা: জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই সম্পদ আপনার মালিকানায় থাকা প্রয়োজন। যদি এই সময়ের মধ্যে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তাহলে কোরবানি ওয়াজিব।
যেসব ক্ষেত্রে কোরবানি ওয়াজিব নয়:
যদি কারো কাছে শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র (যেমন: বাড়ি, গাড়ি, দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিস) থাকে, কিন্তু নিসাব পরিমাণ অতিরিক্ত সম্পদ না থাকে।
যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে কিন্তু তা ঋণ বা অন্য কোনো বাধ্যবাধকতায় আবদ্ধ থাকে।
গরিব বা নিম্ন আয়ের মানুষ যাদের নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই।
মনে রাখবেন:
কোরবানির নিয়ত করা জরুরি। যদি আপনার উপর কোরবানি ওয়াজিব হয়, তাহলে যথাসময়ে তা আদায় করা ফরজ।পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে একাধিক কোরবানি দেওয়া মুস্তাহাব (যদি সামর্থ্য থাকে)।যদি কেউ নিসাবের মালিক না হয়, কিন্তু ইচ্ছা করে কোরবানি দিতে চায়, তাহলে তা নফল ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে।
আপনার সম্পদের অবস্থা বিবেচনা করে যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তাহলে কোরবানি আদায় করা আপনার উপর ওয়াজিব। যদি নিশ্চিত না হন, তবে কোনো আলেম বা ইসলামিক স্কলারের সাথে পরামর্শ করতে পারেন।
কুরবানির ফরজ সংখ্যা নিয়ে ইসলামি স্কলারদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে, তবে প্রধান দুটি মত হলো:
একটি ফরজ (ওয়াজিব): হানাফি মাজহাব অনুযায়ী, কুরবানি করা ওয়াজিব (আনুগত্যের দিক থেকে ফরজের কাছাকাছি)। যে ব্যক্তি সামর্থ্যবান (প্রয়োজনীয় মালিকানা ও আর্থিক সক্ষমতা আছে), তার জন্য কুরবানি দেওয়া আবশ্যক। এটি ফরজে কিফায়া নয়, বরং প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য আলাদাভাবে ওয়াজিব।
ফরজে কিফায়া বা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা: শাফেয়ী, মালিকি ও হাম্বলি মাজহাব মতে, কুরবানি সুন্নাতে মুয়াক্কাদা (অত্যন্ত জোরেশোরে সুপারিশকৃত সুন্নত), তবে ফরজ নয়। তবে একটি সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে কিছু লোক কুরবানি দিলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যায় (ফরজে কিফায়া)।
হানাফি মতের বিস্তারিত:
শর্ত: নিসাব পরিমাণ সম্পদ (সাড়ে ৭ তোলা সোনা বা সাড়ে ৫২ তোলা রূপা বা সমমূল্যের সম্পদ) থাকলে এবং প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে কুরবানির সামর্থ্য থাকলে তা ওয়াজিব।
শাস্তি: সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি না দিলে গুনাহ হবে।
হাঁস বা মুরগি জবাই করার ইসলামিক নিয়ম ও দোয়া নিম্নরূপ:
জবাইয়ের নিয়ম:
জবাইকারীর যোগ্যতা:
মুসলিম, বালিগ (প্রাপ্তবয়স্ক) ও সুস্থ মস্তিষ্কের ব্যক্তি হতে হবে।
আহলে কিতাব (ইহুদি বা খ্রিস্টান) কর্তৃক জবাইও ইসলামে বৈধ, তবে মুসলিমের জবাই উত্তম।
জবাইয়ের সরঞ্জাম:
ধারালো ছুরি বা চাকু ব্যবহার করতে হবে, যাতে প্রাণী দ্রুত মারা যায় ও কম কষ্ট পায়।
জবাইয়ের পদ্ধতি:
প্রাণীর গলার শাহরুগ (শ্বাসনালি), মরী (খাদ্যনালি) ও ওয়াদাজাইন (দুটি প্রধান রক্তনালি) কাটতে হবে।
"বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার" বলে জবাই করতে হবে।
জবাইয়ের সময় প্রাণীর মুখ কিবলামুখী করা সুন্নত।
জবাইয়ের শর্ত:
জবাইয়ের আগে প্রাণীকে পানি খাওয়ানো ও সুস্থ দেখা উচিত।
জবাইয়ের সময় প্রাণীকে যন্ত্রণা না দেওয়া (যেমন: ধারালো ছুরি না দেখানো বা অন্য প্রাণীর সামনে জবাই না করা)।
জবাইয়ের দোয়া:
জবাইয়ের সময় নিম্নের দোয়া পড়া সুন্নত:
بِسْمِ اللهِ، اللهُ أَكْبَرُ
"বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার"
(আল্লাহর নামে, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ)
বিঃদ্রঃ শুধু "বিসমিল্লাহ" বললেও জবাই শুদ্ধ হবে, কিন্তু "আল্লাহু আকবার" যোগ করা উত্তম (সুন্নত)।
জবাই পরবর্তী করণীয়:
রক্ত সম্পূর্ণ বের হয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
মাংস কাটার আগে পশু ঠাণ্ডা হতে দিন।
হালাল পদ্ধতিতে জবাই না হলে বা দোয়া ভুলে গেলে মাংস হারাম হবে না, তবে সুন্নত অনুযায়ী করা জরুরি।
সতর্কতা:
জবাইয়ের সময় প্রাণীকে অত্যাচার করা বা অকারণে কষ্ট দেওয়া হারাম।
বৈদ্যুতিক শক বা অন্য পদ্ধতিতে জবাই ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়, যদি না তা হালাল শর্ত পূরণ করে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর দেওয়া হালাল রিজিক গ্রহণ করার তাওফিক দিন। আমীন।
অন্যান্য মাজহাবের অনুসারীরা সাধারণত কুরবানিকে সুন্নত হিসেবে পালন করেন, তবে তা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।সুতরাং, ফরজ/ওয়াজিব হিসেবে কুরবানির সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়, বরং এটি ব্যক্তির সামর্থ্য ও মাজহাবের উপর নির্ভর করে।
কোরবানি সম্পর্কে কোরআনে বেশ কিছু আয়াত রয়েছে, যেখানে আল্লাহ তাআলা কোরবানির গুরুত্ব, বিধান ও তাৎপর্য বর্ণনা করেছেন। নিম্নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আয়াত উল্লেখ করা হলো:
১. সূরা আল-কাওসার (১০৮:২)
আয়াত:
"فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ"
ব্যাখ্যা: এই আয়াতে নামাজ ও কোরবানিকে একসাথে উল্লেখ করে এর গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে।
২. সূরা আল-হজ্জ (২২:৩৪-৩৭)
আয়াত (২২:৩৪):
আয়াত (২২:৩৬):
"وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُمْ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ لَكُمْ فِيهَا خَيْرٌ"
আয়াত (২২:৩৭):
ব্যাখ্যা: এই আয়াতগুলোতে কোরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে, যা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাকওয়া অর্জন।
৩. সূরা আল-আন‘আম (৬:১৬২-১৬৩)
আয়াত (৬:১৬২):
ব্যাখ্যা: এই আয়াতে কোরবানিকে আল্লাহর ইবাদতের অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
৪. সূরা আল-বাকারা (২:১৯৬)
অর্থ: "হজ ও উমরা আল্লাহর জন্য পূর্ণ করো। যদি তোমরা বাধাগ্রস্ত হও, তবে সহজলভ্য কোরবানি দাও।
ব্যাখ্যা: হজের সময় কোরবানির বিধান এখানে উল্লেখিত হয়েছে।
কোরবানির শিক্ষা ও তাৎপর্য:
কোরবানি হলো তাকওয়া ও আত্মত্যাগের প্রতীক (সূরা হজ্জ ২২:৩৭)।
এটি হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নত, যিনি আল্লাহর নির্দেশে তাঁর প্রিয় বস্তু কোরবানি করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন (সূরা আস-সাফফাত ৩৭:১০২-১০৭)।
কোরবানির মাধ্যমে গরিব-দুঃখীদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা হয়।
উপসংহার
কোরবানি শুধু পশু জবাই নয়, বরং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আত্মসমর্পণ ও ত্যাগের মহান শিক্ষা বহন করে।
ছাগল জবাই করার ইসলামিক নিয়ম (হালাল পদ্ধতি) নিম্নরূপ:
প্রস্তুতি:
১. ছাগল নির্বাচন: সুস্থ, রোগমুক্ত ও হালাল প্রাণী নির্বাচন করুন।
২. ধারালো ছুরি প্রস্তুত: জবাইয়ের আগে ছুরি/চাকু ধারালো করে নিন যাতে প্রাণীকে কষ্ট না হয়।
৩. কিবলামুখী করা: প্রাণীকে কিবলার (মক্কার কাবা শরিফের) দিকে মুখ করে শোয়ান।
জবাইয়ের নিয়ম:
১. বিসমিল্লাহ বলা: জবাইয়ের সময় "বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার" (আল্লাহর নামে, আল্লাহ সর্বGreatest) বলতে হবে। ইচ্ছাকৃতভাবে এটি না বললে গোশত হালাল হবে না।
২. শিরা-উপশিরা কাটা: গলার তিনটি প্রধান অংশ কাটতে হবে:
শ্বাসনালী (Trachea)
খাদ্যনালী (Esophagus)
রক্তনালী (Jugular Veins & Carotid Arteries)
৩. দ্রুত ও দক্ষভাবে জবাই: একটানে কাটতে হবে যাতে প্রাণী দ্রুত মারা যায় ও কম কষ্ট পায়।
জবাই পরবর্তী注意事项:
রক্ত সম্পূর্ণ বের হতে দিন (হালাল গোশতের জন্য এটি জরুরি)।
জবাইয়ের পর প্রাণী নড়াচড়া বন্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
প্রাণীকে অন্যান্য প্রাণীর সামনে জবাই না করা উত্তম।
নিষিদ্ধ বিষয়:
প্রাণীকে অচেতন করা বা মাথায় আঘাত করে জবাই করা (ইসলামে নিষেধ, তবে আধুনিক বিতর্ক রয়েছে)
জবাইয়ের আগে প্রাণীকে পানি বা খাবার দেওয়া থেকে বিরত রাখা উচিত নয়
মনে রাখবেন: হালাল পদ্ধতিতে জবাই করা গোশত খাওয়া ইসলামে বাধ্যতামূলক। এটি না মানলে গোশত হারাম হতে পারে।